search

Monday, September 22, 2014

আমার বাবা...


একটা মানুষের জীবনে পঁচিশ বছর বেশ বড় সময়কাল, জানি না কতদিন বাঁচব, তবুও প্রায় আমার জীবনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সময়কাল। আজ থেকে ঠিক পঁচিশ বছর আগে, ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯, বাবা মারা যান। মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগে নবাব বাহাদুর’স স্কুলে আমি তখন ক্লাস সেভেনের ছাত্র... প্রথমটা একটু হকচকিয়ে গেলেও খুব একটা দুঃখ পেয়েছিলাম বলে মনে করতে পারিনা, আসলে সেই হাসপাতালে বাবা কে ভর্তি করা থেকে ম্যাটাডোরে করে বহরমপুর শ্মশানে তাঁর দেহ দাহ করা পর্যন্ত্য একটা কেমন যেন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। প্রতি বছরই পুজোর ঠিক আগে বাবা হাসপাতালে ভর্তি হতেন, আবার কয়েকদিন পরে ফিরেও আসতেন, কিন্তু এবার যে আর হাসপাতাল থেকে ফিরবেন না সেটা
বুঝতেও বেশ কয়েকদিন লেগেছিল। এরপর বহরমপুরেই আত্মীয়-স্বজন, বাবার অফিসের কাকুরা, আর বাবার কো-অর্ডিনেশন কমিটির সব চেনা লোকজনের মাঝে আমি ঠিক অনুভব করতে পারিনি কি হারিয়েছি... আর সেই সময় সমস্ত বাবা ছাই হয়ে যাবার পর, গঙ্গায় ডুবদিয়ে ভিজে সাদা কাপড়ে বাড়ি আসতেই মেজজেঠুর ছেলে রাজেশদাদা যখন তার সমস্ত গল্পের বইয়ের ভান্ডার অবলীলাক্রমে আমার হাতে দিয়ে দিল, সদ্য বাবা হারানো ছেলেটা তাতেই ডুবে গেল দিন দশেক। গাদা গাদা ছোট ছোট আনন্দমেলা, শুকতারার নেশায় সকালে কাঠের ধোঁয়ায় হবিষ্যি রান্না করাও খুব মজার সঙ্গে করেছিলাম, সেই দশ-বারো দিন, আমি প্রায় আমার তেরো বছরের জীবনে সবচেয়ে বেশী গোগ্রাসে গল্প গিলেছিলাম... ...... 
 

সব কিছু মিটে যাবার পর যখন ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিস সংলগ্ন কোয়ার্টারটিতে ফিরে এসে কয়েকদিন আগে বাবার কিনে দেওয়া সাইকেলটা দেখে প্রথম আমার বাবার অভাব মনে হল, ভাবলাম বাবা যে বলে গেল হাসপাতাল থেকে এসে আমাকে সাইকেল শেখাবে, এখন সেটার কি হবে ? তার পর যখন স্কুল যাবার সময় বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়ালাম...এই প্রথমবার একা একা... হটাৎ কোথা থেকে একরাশ কান্না এসে আমাকে বুঝিয়ে দিল, বাড়ির ভেতরে শোকাচ্ছন্ন মা থাকলেও, এই বাইরের জগতে আমি একেবারে একা... ...সেই শুরু হল আমার একা পথচলা... বারবার আছাড় খেয়ে রক্তারক্তি করে একা একা সাইকেল শেখা...আরো কত কি শেখা... 

তবে সত্যিকরে উপলব্ধি করলাম নিজে বাবা হয়ে... প্রতি মুহুর্তে একটি একটি করে নতুন জিনিস শিখছি... আর একটু একটু করে সেই পঁচিশ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মানুষটাকে বুতে পারছি...
সেই মানুষটা যার কাছে সর্বহারাদের পার্টি ছিল প্রথম সংসার, যে অবলীলাক্রমে তার মাস মাইনের টাকা ঘর পুড়ে যাওয়া রহেদ শেখ বা বন্যায় ফসল ভেসে যাবার পর হারান ঘোষের হাতে তুলে দিয়ে এসে স্ত্রীর গঞ্জনা শুনত, যার প্রিয় গান ছিল “ও আমার রক্তে ধোয়া ধান” আর “পথের ক্লান্তি ভূলে”,যে ছেলের পুজোর জামা কেনার টাকা দিয়ে পোস্টার লেখার রঙ তুলি নিয়ে চলে আসত, একাধারে লেখা, নির্দেশনা আর অভিনয়ে ব্যস্ত সেই নাটক পাগল লোকটা, যে ভগীরথপুর নামের এক অজ পাড়াগাঁয়ে প্রতিবছর দশমীর দিনে নতুন নতুন নাটকের আইডিয়ায় মত্ত থাকত, এক অতি সাধারণ পাজামা-পাঞ্জাবী পরিহিত গ্রামসেবক, যে চায়ের দোকানে মুড়ি খেতে খেতে সাধারণ মানুষদের মার্কসবাদ আর মাজরা পোকার কথা বলতে বলতে রাত কাবার করে বাড়ি আসত, আর রাতে ছেলেকে তার নিজের ছেলেবেলার দুষ্টুমির গল্প বলে তাক লাগিয়ে দিত, সেই বাবাটা যেন আরো বেশী বেশী করে আমার কাছের মানুষ হয়ে উঠছে... 

কেমন ছিল সেই সব নাটক যা তিনি লিখে গেছেন ?  

মণিমঞ্জিলের শুরুতে -

 আর প্যালেস দি কাঞ্চন -


 .

















                     [ কলকাতা থেকে কিছু দূরে কল্পিত এক পট ভূমিকায় নাটকের শুরু। পর্দা উঠলে দেখা যাবে প্যালেস দি কাঞ্চনের একটা হল ঘর। বাঁধারে একটা সিঁড়ি। সিঁড়ির ডানধারে একটা বড় দরজা। দরজার ভেতর দিয়ে একটা বারান্দার কিছু অংশ দেখা যাবে।

   রাত গভীর, স্টেজ প্রায় অন্ধকার। ঝড়ের শব্দ। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। কুকুরের ডাক শোনা যায়। কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ের ভয়ার্ত চীৎকার শোনা গেল পারব না, আমি কিছুতেই পারব না। মেয়েটা সিঁড়ি দিয়ে তাড়াতাড়ি নেমে রেলিং ধরে হাঁপাতে লাগল। একটা আলো তার উপর পড়ে। অন্য পাশে একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে, সারা দেহ কালো লং কোটে ঢাকা, মাথায় নাইট ক্যাপ, চোখে গগলস, মুখে ফ্রেঞ্চ কাট দাঁড়ি, হাতে একটা রিভলবার, মুখে চুরুট, পায়ে কালো নাগরা। লোকটা সিঁড়ির দিকে পেছন করে দর্শকদের একপাশে রেখে দাঁড়িয়ে থাকবে। মেয়েটা লোকটাকে দেখতে পায়নি। লোকটা হটাৎ দেশলাই জ্বালিয়ে চুরুট ধরায়। মেয়েটা ভয় পায়। মেয়েটার নাম মুন্নী কলকাতার কুখ্যাত এলাকা থেকে তাকে এখানে আনা হয়েছে। মুন্নীর বয়স ২৪/২৫, মেয়েটা মোটামুটি সুশ্রী।]

Friday, August 08, 2014

একটি বৃষ্টির দিন

একটি বৃষ্টির দিন
-  সৌরভ বাগচী
আজ বৃষ্টি হতে পারে, মা বলল – “আজ যেতে হবেনা তোকে”। ঠিকই বলেছে মা। আমি মেঘের দিকে তাকালাম। মেঘ করলে মন খারাপ হয় কেন জানিনা। কিন্তু শাশ্বত তো আসবে। আমিও যাব। কাল যখন বাড়ি ফিরছিলাম তখন ও অনেকটা ঘুরপথে আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। পৌঁছে দেওয়া মানে তো দূরত্ব বজায় রেখে সাইকেল নিয়ে আমার পেছনে আসা। ও কোনোদিন কিছু বলে না, শুধু তাকায়, চেয়ে থাকে। আর ওই আদ্যিকালের সাইকেলে চড়ে আমাদের রাস্তার ঠিক আগে চলে যায়, যেন ওর চলে যাওয়াটাই সবচেয়ে সত্যি, আর কিছু নয়।

কাল ঘুমোতে পারিনি সারারাত। কি অদ্ভুত অনুভূতিভেবেছিলাম ও হয়তো কিছু বলবে। আমি বিশ্বাস করি ও একদিন বলবেই। আজ দেখা হলে জিগ্যেস করব কি বলতে চাই ও। না আমি কিছু বলব না, অপেক্ষা করে থাকি, কিন্তু কতদিন। আর কাউকে বলব ? না দরকার নেই।

ও খুব ভাল ছেলে। অনেকেই সেটা জানে বা বলে। যদিও সিগারেট খায়, মরুকগে ছাই। বলুক না একদিন তখন দেখা যাবে। আমার সাথে অবশ্য কোনদিন খারাপ ব্যবহার করেনি। ওর নিস্পাপ দুটো আমাকে বিহ্বল করে দেয়। তাকিয়ে থাকি ওর দিকে। কি যে হয় তখন। আমার মনে হয় আমাকে ওর ভালো লাগে, ভালোবাসে কি ? যদি না বাসে, যদি শুধুই বন্ধুদের কাছে হিরো হওয়ার জন্যে আমার পিছনে লেগেছে, তাহলে ? কি করে বুঝব, কাউকে বলাও যাবে না, শুধুশুধু আওয়াজ খাবো বন্ধুদের কাছে। আসলে, ওর কথা অন্যকেউ বললে, আমার রাগ হয়, নিজের একান্ত অনুভব গুলো অন্য কারো সাথে শেয়ার করা যায়না। ও আমার এমন ই এক অনুভব। একে কি ভালবাসা বলে ? জানিনা।

মাকে পটিয়ে যাওয়া যায় আজকে। আমি না গেলে যদি ও আমাকে ডাকতে চলে আসে ! যেমন এসেছিল একদিন। আমার জ্বর হয়েছিলো। ও ঠিক আমাদের গেটের সামনে এসে ডাকলো আমার নাম ধরে। বুক শুকিয়ে গেছিলো আমার। মা রান্নাঘরে, বাবা অফিস থেকে ফেরেনি তখোনো। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসেছিলাম ওকে চলে যেতে বলার জন্য। পাড়ার লোকরাও তো দেখে ফেলতে পারে । ও কেমন সহজভাবে বলল, “আজ যাসনি কেন?” “জ্বর হয়েছে আমার” – বলে আমি দু পা পিছিয়ে এসেছিলাম, ও যদি আমার কপালে হাত দেয়, কিছু বিশ্বাস নেই ওকে। অবশ্য সত্যি লোভ লেগেছিল আমার ওর স্পর্শ পাবার। ও আরো বলেছিলো, “তোর সাথে একটা কথা আছে..."

   “কি কথা, তাড়াতাড়ি বল” – আমি এমন ভাবে বলেছিলাম, যেন ওর কথা শোনার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই আমার, কিন্তু কেউ না জানুক আমি তো জানি, কত কস্টে আমি উত্তেজনা চেপে রেখেছিলাম।

   “আমি, ... আমি কিন্তু তোর পেন টা নিই নি”

আমার একটা পেন স্যর এর বাড়ি থেকে হারিয়ে গেছিল। স্যর বলেছিলেন, ওর কাছে থাকতে পারে। আমি জানি শাশ্বত, তুমি সেটা নাও নি।

   “তোর আর কিছু বলার আছে ?”

   “না, তুই তারপর থেকে আমাকে আ্যভয়েড করে চলিস, কথা বলিস না - ”

   “কথা বলা না বলা টা আমার মুডের ওপর নির্ভর করে” – আমার স্বর টা অকারণে একটু রূঢ় হয়ে গেছিল বোধহয়।

   “ঠিক আছে, চলি...” ও সাইকেলে আওয়াজ তুলে চলে গেছিল।
আমি গেট ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম মিনিট দুয়েক। ঝুনঝুন, ঝুনঝুন। আমাদের গেটে একটা ঘুঙুর লাগানো আছে, সেটার শব্দে নিজেকে সামলে নিয়ে ভেতরে গিয়েছিলাম। চোখে জল এসে গিয়েছিল আমার। ওর সাথে কথা বলতে গিয়ে কি যে হয়ে যায় আমার, সব উলটো পালটা বলে ফেলি।

   আমার না যাওয়া উচিত আজকে। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামবে। স্যর বোধহয় পড়াবেন না। স্যর এর বাড়িতেই দেখি ওকে প্রথমবার। ক্লাস নাইন এ ভর্তি হয়েছে আমাদের স্কুলে। আগে কোথায় যেন পড়ত। স্যর খুব ভালো পড়ান। আর খুব মজার মজার কথা বলেন। আমরা হেসে উঠি। আর শাশ্বত সঙ্গে সঙ্গে আমার দিকে তাকায়। ও ওরকমই, যখন তখন তাকায় আমার দিকে। আমি যে কি করে লুকিয়ে রাখি আমার দুর্বলতা। ও কি বোঝে কিছু, বোকা কোথাকার, কিছু বোঝে নে ছেলেটা। শুধু আমাকে জ্বালাতে পারে। এখানে ওখানে যেখানে আমি যাই না কেন, একবার হলেও আসবে সেখানে। গত দূর্গাপুজোতে, অষ্টমীর অঞ্জলি দেবার সময় দেখি ও একদম আমার পেছনে, কি সাহস, মা ছিল কাছেই, যদি দেখে ফেলত ! একটুও ভয়ডর নেই। আমি ওর দিকে ঘুরে তাকিয়ে ছিলাম, এমন ভাব করলো, যেন চেনেই না আমাকে। এত রাগ হয়েছিল না।

আকাশ ঘিরে মেঘ করেছে। এক্ষুণি বৃষ্টি নামবে।  ছাতা নিতে হবে। আমি ড্রেস করলাম তাড়াতাড়ি। ৫ টা বাজতে ১৫ মিনিট। স্যর ৫ টা থেকে পড়ান। মা কিছু বলল না আর। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। আজ যদি শাশ্বত বলে দেয় ওর যা বলবার, তবে আমি কি বলব ? আমার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধার্ন্ত কি অত সহজে নেওয়া যায় ? আমি যে এত কিছু ভাবছি, ও কি এসব ভেবেছে কোনোদিনও, ওর কাছেও তো সমান গুরুত্বপূর্ণ এটা। সত্যিই কি তাই, নাকি শুধু বন্ধুদের কাছে হিরো হবার ইচ্ছা? কে জানে।

এই মরেছে, ছাতা আনতে গেছি ভুলে। স্যর এর বাড়ি এখান থেকে যতটা, ততটাই আমার বাড়ি। আমার বাড়ি ! মেয়েদের নিজেদের বাড়ি থাকে নাকি কোনো ? হয় বাপের বাড়ি, শ্বশুর বাড়ি, স্বামীর ... ছেলের...। বৃষ্টি আসলে ভিজব। ‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে, ধান দেব মেপে’। আচ্ছা কাকে দেব মেপে ধান ! বৃষ্টিকে কি দেওয়া যায় কিছু, বৃষ্টিতো শুধু কথা বলবে অর্নগল, রিমঝিম ঝরঝর, চোখ বেয়ে ঠোঁটের উপর খুঁজবে কালো তিল। আমার কি হলো আজ, কবি হয়ে যাচ্ছি নাকি। শাশ্বত কবিতা লেখে স্কুল ম্যাগাজিনে। আমাকে নিয়ে লেখে ? জানিনা। এখন যদি ও আসে তা হলেও আমি তাকাব না পিছনে। ওর দিকে না তাকালে ও আমার সাথে কথা বলবে না।

সাইকেলের শব্দ শুনতে পাচ্ছি, শাশ্বত আসছে। আমি কি ঘুরে তাকাব? না তাকাব না। ও তো ডাকতেও পারে।  বৃষ্টির ফোঁটা টুপটাপ পড়ছে গায়ে। সাইকেল টা পাশে আসতেই তাকালাম। না শাশ্বত না, কিন্তু লোকটার দৃষ্টি টা খুব খারাপ। ‘অসভ্য, ছোটলোক’ , দাঁত চিপে মনে মনে বললাম। এই বাবার বয়সি লোকগুলো এত বিকৃত রূচির হয়। মা ঠিক ই বলে, সব পুরূষ সমান। কথাটা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের লেখা একটা উপন্যাসেও পড়েছিলাম মনে হয়। ভদ্রমহিলা কে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত সত্যি কথাটা বলার জন্য।

ওই তো স্যর এর বাড়ি। প্রচন্ড বৃষ্টি পড়ছে, পুরো ভিজে গেছি আমি। এক দৌড়ে স্যর এর বারান্দায় উঠে আমি স্তব্ধ। শাশ্বত বসে আছে একা, স্যর এর ঘরের দরজায় তালা।

“স্যর পড়াবেন না আজ। সবাই এসে চলে গেছে।“ – ও বলল।

“তুই বসে আছিস কেন?” – ওড়নার কোণা দিয়ে মুখের পাশটা মুছতে মুছতে বললাম।

“তোর জন্যে   ” --- আমাকে চমকে দিয়ে বলল ও।

“আমি যাই” বলে পা বাড়ালাম রাস্তার দিকে।

শাশ্বত একবারও ডাকবে না আমায়? আস্তে আস্তে হাঁটছিলাম আমি। আরো ভিজে যাচ্ছিলাম। আর কয়েক পা গেলে আর দেখতে পাবে না আমাকে। ওকে মারতে পারলে ভালো লাগতো। আর একটু আস্তে হাঁটা যায় না ?

“ পাপড়ি শোন-----" ও ডাকলো ।

আমি কি ভুল শুনলাম ?

“পাপড়ি বারান্দায় উঠে আয়”

আমি থামলাম। ঘুরে বললাম, “কেন ?”

“এখানে আয় আগে, বলছি।"

কি বলবে ও ? উঠে এলাম। একদিকে উঁচু বসার জায়গা। বসলাম।

“তুই একদম ভিজে গেছিস, বৃষ্টি টা একটু ধরে আসলে, আমি তোকে পৌঁছে দেব” আমার দিকে তাকিয়ে বলল ও।

আমি তাকাতে পারছিলাম না ওর দিকে। তাকিয়ে ছিলাম বৃষ্টির দিকে। মনের মধ্যে জলতরঙ্গ বাজছিলো। সুরটা রিমঝিম রিমঝিম

একটু পরেই বৃষ্টির বেগ কমলো। আমাকে ওর ছাতা টা দিলো শাশ্বত। ও ভিজে যাচ্ছিল। ওকে ছাতার ভেতর আসতে বললাম। আমার ডান হাত ওর বুকে ঠেকে যাচ্ছিল ছাতা টা ধরে থাকার জন্যে। আমি সরালাম না। সরাতে পারলাম না। একটু উষ্ণতা, ভালোলাগা আমাকে অবশ করে দিয়েছিল।

“পাপড়ি----“

আমি তাকালাম। বৃষ্টির জল পরেছিল বোধহয় আমার চোখে। ওকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম না। এত কাছে তবুও।

ও হাত ধরলো আমার। আমি বাধা দিলাম না।

“পাপড়ি------"

আমি মনে মনে বললাম শাশ্বত, আজ আর কিছু বলো না, আর একদিন বৃষ্টি আসবে, আবার একদিন...... সেদিন.........।











Tuesday, June 10, 2014

কয়েকদিন আগে গৌড় মালদার উপর কিছু বই খুঁজতে গিয়ে একটি বই-এ চোখ আটকে গেল। বইটির নাম “The Ruins of Gour Described"



১৮১৭ সালে লন্ডনের ব্ল্যাক, পারবারি ও অ্যালেন দ্বারা প্রকাশিত বইটি সংকলিত হয়েছে প্রয়াত এইচ ক্রেইটনের পাণ্ডুলিপি ও চিত্রাঙ্কন থেকে। বইটির ভূমিকা থেকে জানা যায় যে হেনরি ক্রেইটনের জন্ম স্কটল্যান্ডে এবং তিনি সান্ডারল্যান্ডে থাকতেন। ১৭৮৩ সালে, তিনি চার্লস গ্র্যান্টের বাণিজ্যিক সহকারী হিসেবে যোগ দেন,  চার্লস গ্র্যান্ট তখন বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তূলা এবং রেশম কারখানার মালদা জেলার কমার্সিয়াল রেসিডেন্টের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী।  কয়েক মাইলের মধ্যেই অবস্থিত গৌড়ের ঐতিহাসিক ধ্বংসস্তূপ। গ্র্যান্ট একটি নীল কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন গোমালটি গ্রামে, যা ছিল সেই বিখ্যাত গৌড় নগরের অভ্যন্তরে। ক্রেইটনকে তিনি সেখানে তদারককারী হিসেবে নিয়োগ করেন এবং ক্রেইটন ১৭৮৬ সাল থেকে ১৮০৭ সালে চল্লিশ বছর বয়েসে তাঁর অকালমৃত্যুর সময় পর্যন্ত সেইখানেই থাকতেন।

          কাজের ফাঁকে ফাঁকে গৌড় নগরের অতীত ইতিহাসের হাতছানি প্রায় নেশা হয়ে উঠেছিল হেনরি ক্রেইটনের। মৃত্যুর সময় বিধবা স্ত্রী এবং সাত সন্তানদের জন্য প্রায় কিছুই রেখে যেতে পারেননি হেনরি। শুধু এই সময়কালে অবসর সময়ে ইতিহাসের খোঁজে গৌড়ের ধ্বংসস্তূপের যে সচিত্র বিবরণ তিনি রেখে গিয়েছিলেন উত্তরকালের জন্য, তা মহাকালের মূল্যে অপরিসীম। তাই সেই প্রয়াত সহকর্মীর স্ত্রী ও সন্তানের জন্য অর্থসংস্থানের উদ্দেশ্যে এই বই-এর সংকলন।

          এই বই বিক্রির অর্থ থেকে হেনরির পরিবার কতটা লাভবান হয়েছিলেন তা আমাদের জানার কোন উপায় না থাকলেও, গৌড় ধ্বংসস্তূপের অসামান্য রেখাঙ্কন ও তার সঙ্গে সেই স্থানের সংক্ষিপ্ত ঐতিহাসিক বিবরণ তাঁর মৃত্যুর দুশো বছরেরও কিছু বেশী সময়ধরে ইতিহাস গবেষকদের সমৃদ্ধ করেছে, এ বিষয়ে আমরা একমত হতে পারি।


          শিল্পী ও ঐতিহাসিক হেনরি ক্রেইটনের উদ্দ্যেশে নীরব শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাই, তাঁরই আঁকা ছবির মাধ্যমে ...... 





Monday, October 15, 2012

শুভ মহালয়া ...

Sunday, April 22, 2012

কেন খুঁজে বার করি দুষ্প্রাপ্য বই - 1

দুষ্প্রাপ্য বই কেন খুঁজে বার করি, আমার অনেক বন্ধুরা এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছেন। ইন্টারনেট আসার অনেক আগে থেকেই একটা বই এর লেজ ধরে আরো একটা বই খুঁজে বের করাটা একটা নেশা ছিল আমার। আমরা যখন কোন বই প্রথমবার পড়ি, তখন একটা প্রত্যাশা নিয়ে বই টা পড়তে শুরু করি, যেটা সাধারনত সৃষ্টি হয় আমাদের বন্ধু-বান্ধব দের সেই বই বা লেখকের সমন্ধে তাদের নিজস্ব মতামত থেকে । যখন আমাদের সেই প্রত্যাশা ছাপিয়ে যান লেখক, তার লেখনশৈলী, চরিত্র-পরিস্ফুটন এবং ঘটনা বিন্যাস দিয়ে, তখন সেই গল্পের চরিত্রের সাথে আমরা একাত্ম হয়ে পরি, নিজেদের ছেড়ে দিই লেখকের হাতে, অমোঘ আকর্ষণে এগিয়ে যাই গল্পের পরিনতির দিকে। এখানেই কালজয়ী সাহিত্যিকদের লেখার অসামান্যতা। আর প্রথমবার পড়ার পর যখন বেশ কিছু বছর পরে একই বই আবার আমরা পড়তে যাই, তখন আমরা বইটা পড়ি সমালোচকের দৃষ্টি দিয়ে, “আগে তো পড়েছি, জানি তো কি হবে, তবু দেখি” – এই ধরনের মনোভাব নিয়ে, আর তখনই বই এর পাতায় পাতায় অনেক তথ্য নতুন ভাবে আবিষ্কার করি, প্রথম বারের সেই পড়ার সময় সেগুলো ছিল গুরুত্বহীন, কারণ গল্পের টান ছিল মুখ্য। এখন এই সব তথ্য মনে কৌতূহল জাগায় – সেই কৌতূহল জন্ম দেয় আরো খুঁজে বার করার তাগিদ।

একটা উদাহরন দিই - “তুঙ্গভদ্রার তীরে” – একটি অসাধারন ঐতিহাসিক উপন্যাস। প্রথমবার পড়ার সময় শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় সৃষ্ট অসাধারন পটভূমিকায় মুগ্ধ হয়ে শুধু পাতার পর পাতা পড়ে গেছিলাম। বয়সও ছিল অনেক কম। মনে আছে, বেশ কিছুদিন বিভোর হয়ে ছিলাম উপন্যাসের চরিত্রগুলোতে। অনেক দিন পর, লেখকের ঐতিহাসিক উপন্যাস সমগ্র কিনলাম বইমেলা থেকে আর অবধারিত ভাবে তুঙ্গভদ্রার তীরে পড়তে গিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন জাগল মনে – তার একটা হলো – বিজয়নগরের এই ইতিহাস কি সত্যি ? নবম শ্রেণী তে ইতিহাসে পড়েছিলাম যে পঞ্চদশ শতকে বিজয়নগর সাম্রাজ্য ভারতের এক গৌরবময় অধ্যায়, হরিহর, বুক্ক, কৃষ্ণদেবরায়, দ্বিতীয় দেবরায় – আর পাশ্ববর্তি বাহমনী সাম্রাজ্যের সাথে তাদের লড়াই। কিন্তু উপন্যাসের এই চরিত্র গুলি কি ছিল সেই সময় – লেখক কি ভাবে এত সুন্দর ছবির মত পটভূমিকা তৈরি করলেন।

একটু উলটে পালটে দেখতেই চোখে পড়ল স্বয়ং লেখকের ভূমিকা –

“এই কাহিনীর ঐতিহাসিক পটভুমিকা Robert Sewell-এর A Forgotten Empire এবং কয়েকটি সমসাময়িক পান্থলিপি হইতে সংগৃহীত। Sewell-এর গ্রন্থখানি ৬৫ বছরের পুরাতন। তাই ডক্টর রমেশচন্দ্র মজুমদার মহাশয়ের সম্পাদিত সাম্প্রতিক গ্রন্থ The Delhi Sultanate পাঠ করিয়া Sewell-এর তথ্যগুলি শোধন করিয়া লইয়াছি। আমার কাহিনীতে ঐতিহাসিক চরিত্র থাকিলেও কাহিনী মৌলিক; ঘটনাকাল খৃ ১৪৩০ এর আশেপাশে। তখনো বিজয়নগর রাজ্যের অবসান হইতে শতবর্ষ বাকি ছিল”।

অতএব Robert Sewell-এর A Forgotten Empire ও ডক্টর রমেশচন্দ্র মজুমদার মহাশয়ের সম্পাদিত The Delhi Sultanate এই দুটি বই খুঁজে বের করে পড়ার ইচ্ছা জাগল। আর সঙ্গে সঙ্গে লেখকের লেখা সমসাময়িক পান্থলিপি সেগুলোও খুঁজে বের করা যায় কিনা সেটাও।

Sewell-এর বইটা পেলাম University of Michigan এর ডিজিটাল আর্কাইভে। বইটি স্ক্যান করা হয়েছে জয়পুর রাজ্যের পিলানি বিড়লা সেন্ট্রাল লাইব্রেরী থেকে (ভাবতেও অবাক লাগে, কোথায় জয়পুর আর কোথায় মিশিগান!)। এক অসাধারন ইতিহাসের দলিল এই বই। Robert Sewell (1845-1925) ছিলেন ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষের একজন রাজকর্মচারী।মাদ্রাজ প্রভিন্সের এই রাজপ্রতিনিধি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন দুই পর্তুগীজ ব্যবসায়ী ও পর্যটক Fernāo Nuniz and Domingo Paes এর ভ্রমণ বিবরণ যার পান্ডুলিপি একটি ভেড়ার চামড়ার ফোল্ডারে করে কেউ গোয়া থেকে লিসবনে পাঠিয়েছিলেন, খুব সম্ভবত পাঠানো হয়েছিল বিখ্যাত ঐতিহাসিক ব্যারোজ কে। সেই পান্ডুলিপি রক্ষিত ছিল প্যারিসের Bibliotheque Nationale – তে “পোর্ট নং ৬৫” নামক আধারে, আর ১৯০০ সালে প্রথমবার জনসমক্ষে প্রকাশিত সেই পান্ডুলিপির অনুবাদ করেন Sewell ও তার সাথে অন্য পর্যটকদের দলিল নিয়ে ভারতের ইতিহাসের বিজয়নগরের এক অসামান্য চিত্র তুলে ধরেছিলেন বইটিতে।

পড়তে পড়তে এক জায়গায় গিয়ে চোখ আটকে গেল – পারস্য থেকে আসা পর্যটক আবদুল রাজ্জাক এর বিবরণীতে রাজা দেবরায় এর উপর তাঁর ভাই এর গুপ্তহত্যার চেষ্টা। শরদিন্দুবাবু ও একই ঘটনা বলেছেন তাঁর উপন্যাসে, শুধু একটু গল্পের প্রয়োজনে নাটকীয়তা অবশ্যি এসেছে। কল্পনার সাথে ইতিহাসের মেলবন্ধনের উদাহরণ এই ঘটনা। Robert Sewell-এর A Forgotten Empire থেকে সেই বিবরণ তুলে দিচ্ছি -

On a day which must have been between November 1442 and April 1443 a desperate attempt was made on the life of King Deva Raya by one of his closest relatives-a brother, according to Abdur Razzak, a nephew, according to Nuniz. Abdur Razaak's story is without doubt the more reliable of the two, since he is a con- temporary witness. Abdur Razzak was ambassador from Persia to Calicut and Vijayanagar, and his account is particularly important as it definitely fixes the date.

“During the time that the author of this narrative was still sojourning at Calicut (November 1442 to April 1443) there happened in the city of Bidjanagar an extraordinary and most singular occurrence. . . .

The king's brother, who had had a new house built for himself, invited thither the monarch and the principal personages of the empire. Now it is an established usage of the infidels never to eat in presence of each other. The men who were invited were assembled together in one grand hall ..At short intervals the prince either came in person or sent some messenger to say that such or such great personage should come and eat his part of the banquet. Care had been taken to bring together all the drums, kettledrums, trumpets, and flutes that could be found in the city, and these instruments playing all at the same time, made a tremendous uproar. As soon as the individual who had been sent for entered the abovementioned house, two assassins, placed in ambush, sprang out upon him, pierced him with a poignard, and cut him in pieces. After having removed his limbs, or rather the fragments of his body, they sent for another guest, who, once having entered this place of carnage, disappeared. . . . In consequence of the noise of the drums, the clamour, and the tumult, no one was aware of what was going on. In this manner all those who had any name or rank in the state were slaughtered. The prince, leaving his house all reeking with the blood of his victims, betook himself to the king's palace, and addressing himself to the guards who were stationed in that royal residence, invited them with flattering words to go to his house, and caused them to follow the steps of the other victims. So that the palace was thus deprived of all its defenders. This villain then entered into the king's presence, holding in his hand a dish covered with betel-nut, under which was concealed a brilliant poignard. He said to the monarch. The hall is ready and they only wait your august presence."

The king, following the maxim which declares that eminent men receive an inspiration from heaven, said to him, I am not in good health to-day.

This unnatural brother, thus losing the hope of enticing the king to his house, drew his poignard, and struck him therewith several violent blows, so that the prince fell at the back of his throne. The traitor, thus believing that the king was dead, left there one of his confidants to cut off the monarch's head then going out of the hall he ascended the portico of the palace, and thus addressed the people: 'I have slain the king, his brothers, and such and such emirs, Brahmins, and viziers; now I am king.'

Meanwhile his emissary had approached the throne with the intention of cutting off the:' king's head, but that prince, seizing the seat behind which he had fallen, struck the wretch with it with so much violence on the chest that he fell upon his back. The king then, with the help of one of his guards, who at the sight of this horrible transaction had hidden himself in a corner, slew this assassin, and went out of the palace by way of the harem.

His brother, still standing on the steps of the hall of council, invited the multitude to recognise him as their king. At that moment the monarch cried out, 'I am alive. I am well and safe. Seize that wretch." The whole crowd assembled together threw themselves upon the guilty prince and put him to death.

The only one who escaped was Danaik, the vizier, who previously to this sad event had gone on a voyage to the frontier of Ceylon. The king sent a courier to him to invite him to return, and informed him of what had just occurred. All those who had in any way aided in the conspiracy were put to death. Men in great numbers were slain, flayed, burnt alive, and their families entirely exterminated. The man who had brought the letters of invitation was put to the last degree of torture. . . ."

বইটির শেষ দিকে পরিশিষ্ট তে আবার পেলাম আর একটি কৌতূহলোদ্দীপক অংশ – “Diamonds”. সঙ্গে সঙ্গে মনে পরল সদ্য পড়া সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর কিশোর উপন্যাস “বিজয়নগরের হীরে” (কাকাবাবু)। এই গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৮ সালের পূজাবার্ষিকী আনন্দমেলা পত্রিকায়। সেখানে মুরগীর ডিমের আকৃতির একটি হীরে কে ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে। এখানেও পেলাম তার উল্লেখ - the diamond "as large as a hen's egg" . কোহিনূর হীরের ইতিহাসও আছে এই অংশটিতে।

পড়তে পড়তে হীরের ইতিহাসে হারিয়ে গেলাম। কত শত অভিশাপ, যুদ্ধ, রক্তপাত এই সব মহামূল্যবান হীরে নিয়ে... এখানে খোঁজ পেলাম আরো দুটি বই এর –

Travels in India - Jean-Baptiste Tavernier, Valentine Ball. Vol. I & II

আর

The Great Diamonds of the world by Edwin W Streeter.

তাহলে কি হলো, ছিল রুমাল হয়ে গেল বেড়াল !। আরো আছে, পরে বলব।

২৮ মার্চ ২০১২ হীরের গল্প পরে করা যাবে, আরো একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। কয়েকদিন আগে এক সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি খবর দেখলাম, মুর্শিদাবাদ জেলার নবগ্রাম থানার অন্তর্গত কিরীটেশ্বরী গ্রাম পঞ্চায়েতের সুকুল গ্রামে ১০০ দিনের কাজে পুকুর খনন করা হচ্ছিল। হটাৎ কোদালের কোপে উঠে আসতে থাকে প্রাচীন যুগের পোড়ামাটির সব প্রত্নসামগ্রী। সংবাদদাতা মুর্শিদাবাদ জেলার প্রত্নতাত্বিক মাহাত্মের কথাপ্রসঙ্গে জানিয়েছেন কাছাকাছি অবস্থিত ঐতিহাসিক স্থানের কথা। জীবনের প্রায় অর্ধেক মুর্শিদাবাদে কেটেছে, তাই কিরীটেশ্বরী মন্দির এর কথা জানা থাকলেও প্রথম জানলাম যে নবগ্রাম থানার অমৃতকুন্ড নামক গ্রামে আছে একটি সূর্্য্য মন্দির যা নাকি কোনারকের পর পরই নির্মিত হয়েছিল! ভেবে দেখলাম, তাই তো, বাংলার পুরাতত্ব বা মন্দির মসজিদ সমন্ধে কিছুই জানিনা প্রায়।

বাংলার মন্দির সমন্ধে বই খোঁজা শুরু করলাম, অনেক অজানা তথ্য উন্মেলিত হতে লাগল। উপলব্ধি করলাম, ভারতের ইতিহাসে কিছু মহানুভব বিদেশী ব্যক্তি সমুহ ও ব্রিটিশ রাজকর্মচারীদের অসাধারন ভূমিকার। সাহেব মানেই সে অত্যাচারী এই ধারণা যে কত ভূল তার প্রমাণ এই সব ইংরেজ যারা উনিশ শতকের প্রথমভাগে এসে ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি, স্থাপত্য, জীবজগতের কথা লিপিবদ্ধ করেছেন এবং যথাযথ রক্ষণবেক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শাসনকালে যে মহান বিদেশী বিশিষ্ট জনেরা আমাদের ভাষা, সংস্কৃতির বিকাশে যে সুবিশাল কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাঁদের অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞচিত্তে মাথা নত হয়ে আসে। এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা উইলিয়াম জোন্স, শ্রীরামপুরে প্রথম ছাপাখানার জনক উইলিয়াম কেরী, অশোকের শিলালিপির পাঠোদ্দার করা জেমস প্রিন্সেপ, প্রাচ্য-ভাষা গবেষক হেনরি ফার্দিনান্দ ব্লোচম্যান যিনি আইন-ই-আকবরী সহ প্রচুর ভারতীয় গ্রন্থের অনুবাদক, বাংলা সাহিত্যের দিকপাল জন মার্শম্যান, ভারতীয় যাদুঘর এবং বোটানিকাল গার্ডেন এর জন্মদাতা ডাচ উদ্ভিদতত্ববিদ নাথালিয়েল ওয়ালিচ, স্বনামখ্যাত হেনরি ভিভিয়ান ডিরোজিও, প্রফেসর এ এল বাসাম, ভিনসেন্ট স্মিথ প্রমুখ ঐতিহাসিক, ভারতীয় পুরাতত্ব সর্বেক্ষণ এর প্রতিষ্ঠাতা স্যর আলেক্সান্ডার কানিংহাম, রাজস্থানের ইতিহাস লেখক কর্নেল টড কতজনের কথা উল্লেখ করব। জানিনা আগামী প্রজন্ম এঁদের কথা মনে রাখবে কিনা।

আমাদের দেশে প্রাচীন গ্রন্থের অভাব নেই। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে প্রাচীন ইতিহাসের বই সে রকম একটা নেই বললেই চলে। কলহনের রাজতরঙ্গনী বই এ একমাত্র কাশ্মীরের ধারাবাহিক ইতিহাসের দলিল, এছাড়া প্রাচীন গ্রন্থে ইতিহাস আলোচিত হয়েছে তার আর কোন উদাহরণ মনে পড়ছে না। আমাদের সৌভাগ্য যে উনবিংশ শতকে ইউরোপীয় পন্ডিতগন প্রাচীন মুদ্রা, লিপি, স্থাপত্য, ধ্বংসাবশেষ ইত্যাদি আবিষ্কার করে ভারতের ইতিহাসের কাঠামো উদ্ধারের সূচনা করেন এবং তাঁদের সাহায্য ও প্রদর্শিত পথে আমাদের দেশের ঐতিহাসিকগণ ভারতের ইতিহাসের সেই ইতিহাসের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছেন।

বাংলার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। বাংলা সাহিত্যে ইতিহাস নিয়ে প্রাচীন লেখা খুব বেশী নেই। এ বিষয়ে প্রথম গ্রন্থ বোধহয় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অধ্যাপক পন্ডিত মৃত্যুঞ্জয় শর্মা বিরচিত রাজাবলি। ১৮১০ সালে প্রথম প্রকাশিত হওয়া এই বই এ “কলির প্রারম্ভ হইতে ইংরাজের অধিকার পর্য্যন্ত ভারতবর্ষে যত রাজা বা সম্রাট হইয়াছেন, তাহাদের ইতিহাস সংক্ষেপে বর্ণিত হইয়াছে” বইটি পড়লে সেকালে বাঙ্গালী দের ইতিহাসচর্চার কি অবস্থা ছিল তা উপলব্ধি করা যায়। তবে অবশ্যই কেবলমাত্র পুরান ও ধর্মপুস্তক থেকে আহোরিত জ্ঞান থেকে ইতিহাস রচনা করার প্রথম প্রয়াস প্রশংসনীয়।

রাজাবলি পুরো বইটি পড়ুন এখানে

পরবর্তী একশ বছরে বাংলায় পুরাতত্ম ও ইতিহাস চর্চা কতটা পরিনত হয় তার প্রমাণ রমাপ্রসাদ চন্দের লেখা গৌড়রাজমালা বই টি তে। গৌড়রাজমালা বিজ্ঞানসম্মত ভাবে লিখিত প্রথম বাংলার ইতিহাস। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে রচিত এই বইটি ইতিহাসের প্রামাণ্য লিপি, স্থাপত্য ও ঐতিহাসিক পদ্ধতিতে লিখিত হয়েছিল তা বইটির ভূমিকায় শ্রী অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় মহাশয়ের অসাধারন লেখাটিতে প্রমাণিত হয়।

বইটির ভূমিকা পড়ুন এখানে

-

পুরো বইটি পড়ুন এখানে

বাংলা সাহিত্যের মহাসাগর যে কত গভীর, যে একবার সেই মহাসাগরে ঝাঁপ দেবে সেই একমাত্র বুঝতে পারবে। “গভীরে যাও আরো গভীরে যাও...” গানটি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস চর্চার প্রার্থনা সঙ্গীত হতে পারে। বাংলা সাহিত্যের শুধুমাত্র ইতিহাসের বই এর অনুসন্ধান করতে গিয়ে এত অজানা তথ্য একের পর এক উন্মোচিত হচ্ছে, যে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাচ্ছি। তাই এক প্রসঙ্গের আলোচনা করতে গিয়ে খেই হারিয়ে অন্য প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছি অবলীলাক্রমে, লেখার ধারাবাহিকতা নষ্ট হচ্ছে সেই জন্যে। যাই হোক, প্রসঙ্গক্রমে যা যা জানছি, এখানে দিনলিপির মত লিখে চলেছি। সাহিত্যের ইতিহাস রচনা আমার উদ্দেশ্যনয়, প্রধান উদ্দেশ্য বাংলাসাহিত্যের সেই গভীরে ঝাঁপ দেওয়ার ইচ্ছে জাগিয়ে তোলার, হোক সীমিত, তবুও কিছু নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলা সাহিত্যের সেই অজানা ইতিহাসের খন্ডচিত্র তুলে ধরার যে দায়বদ্ধতা থেকে এই গ্রুপের সৃষ্টি, তার প্রতি অনুগত থাকলেই এই লেখা সার্থক হবে।

বাংলার ইতিহাসের উপর যা যা বই লেখা হয়েছে, তার সম্পর্কে আলোচনার আগে একবার বাংলা সাহিত্যের সমগ্র ইতিহাসের উপর একবার খুব দ্রুত চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক। আমাদের নবম দশম শ্রেণীতে বাংলা যাদের প্রথম ভাষা ছিল, তারা সাধারনত অনিচ্ছা সহকারে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস অধ্যয়ন করেছেন, তাই অধিকাংশ নাম আমাদের চেনা চেনা লাগবে নিশ্চয়ই। আমি একবার খুব সংক্ষেপে সেই ইতিহাসের রেখাচিত্র আমার অপটু হাতে আঁকার চেষ্টা করছি।

খুব সাধারন ভাবে বাংলা ভাষার ইতিহাস কে কালানুক্রমিক ভাবে সাজালে এই রকম একটা কিছু দাঁড়াবে –

বাংলা সাহিত্যের আদি যুগ

চর্যাপদ (চর্য্যাচর্য্য বিনিশ্চয়), বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের অনান্য লেখা (বোধিচর্যাবতার, দোহাকোষ ইত্যাদি)

প্রাক মুসলিম যুগ – ডাক ও খনার বচন, শূন্য পুরান বা ধর্মপূজা (রামাই পন্ডিত), ধর্ম ঠাকুরের গান, সহজিয়া সম্প্রদায়, ব্রতকথা, পাল রাজাদের গান, শৈব-গীতি, গোপিচন্দ্রের গান, গোরক্ষবিজয়

লৌকিক সাহিত্য

মনসামঙ্গল – হরিদত্ত,নারায়নদেব, বিজয়গুপ্ত, দ্বিজ বংশীদাস, ষষ্টীবর ও গঙ্গাদাস, কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ, জগজ্জীবন ঘোষাল, রামবিনোদ, দ্বিজ রসিক, জগমোহন মিত্র, জীবন মৈত্রেয়, বিপ্রদাস পিপলাই)

চণ্ডীমঙ্গল, কালকেতুর উপাখ্যান, ধনপতি সদাগরের উপাখ্যান (মানিক দত্ত, দ্বিজ জনার্দন, মদন দত্ত, মুক্তারাম সেন, দেবীদাস সেন, শিবনারায়ান দেব, কীর্ত্তিচন্দ্র দাস, বলরাম কবিকঙ্কন, দ্বিজ হরিরাম, মাধবাচার্য্য, কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম,ভবানীশঙ্কর দাস, জয়নারায়ন সেন, শিবচরন সেন, দ্বিজ কমললোচন, ভবানীপ্রসাদ কর, রূপ নারায়ন ঘোষ, ব্রজলাল, যদুনাথ, কৃষ্ণকিশোর রায়)

মঙ্গল কাব্যের শেষ অধ্যায় – কবিরঞ্জন রামপ্রসাদ সেন, রায় গুনাকর ভারতচন্দ্র রায়

অপ্রধান মঙ্গলকাব্য – গঙ্গাদেবী, শীতলাদেবী, ষষ্ঠী দেবী, লক্ষ্মীদেবী, সরস্বতী দেবী, সূর্য্য দেবতা, শনি দেবতা, সত্যনারায়ন, সত্যপীর, দক্ষিণ রায় ও সোনা রায় (ব্যাঘ্র দেবতা)

ধর্ম-মঙ্গল (ময়ুর ভট্ট, গোবিন্দরাম বন্দ্যোপাধ্যায়, খেলারাম, মানিক গাঙ্গুলী, সীতারাম দাস, রামদাস আদক, রামচন্দ্র বাড়ুয্য, রূপরাম, ঘনরাম, নরসিংহ বসু, সহদেব চক্রবর্ত্তী)

শিবায়ন (রামকৃষ্ণ দেব, জীবন মৈত্রেয়, রামেশ্বর ভট্টাচার্য, দ্বিজ কালিদাস)

বাংলা সাহিত্যের মধ্য যুগ

অনুবাদ সাহিত্য - পৌরানিক মহাকাব্যের অনুবাদ

রামায়ন (কৃত্তিবাস, শঙ্কর কবিচন্দ্র, অনন্ত, মহিলা কবি চন্দ্রাবতী, দ্বিজ মধুকন্ঠ, রামশঙ্কর দত্ত, ঘনশ্যাম দাস, দ্বিজ দয়ারাম, কৃষ্ণদাস পন্ডিত, ষষ্ঠীবর ও গঙ্গাদাস সেন, দ্বিজ লক্ষ্মণ, দ্বিজ ভবানী, কবি দুর্গারাম, জগতরাম ও রামপ্রসাদ, শিবচন্দ্র সেন, রামানন্দ ঘোষ, রঘুনন্দন গোস্বামী, রামমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, অদ্ভুতাচার্য, রামগোবিন্দ দাস)

মহাভারত (কাশীরাম দাস, সঞ্জয়, কবীন্দ্র পরমেশ্বর, শ্রীকরণ নন্দী, ষষ্ঠীবর ও গঙ্গাদাস সেন, রাজেন্দ্র দাস, গোপীনাথ দত্ত, দ্বিজ অভিরাম, নিত্যানন্দ ঘোষ, কবিচন্দ্র, ঘনশ্যাম দাস, চন্দনদাস মন্ডল, নন্দরাম দাস, অনন্ত মিশ্র, শ্রীনাথ ব্রাক্ষ্মণ, বাসুদেব আচার্য, বিশারদ, সারণ, দ্বিজ কৃষ্ণরাম, রামচন্দ্র খাঁ, লক্ষ্মণ বন্দ্যোপাধ্যায়, রামেশ্বর নন্দী)

বিবিধ পৌরানিক অনুবাদ – নল দময়ন্তী (মধুসূদন নাপিত), কাশীখন্ড (জয়নারায়ন ঘোষাল), মায়াতিমিরচন্দ্রিকা (রামগতি সেন)

বৈষ্ণব অনুবাদ সাহিত্য – ভাগবত (মালাধর বসু, মাধবাচার্য্য, শঙ্কর কবিচন্দ্র, কৃষ্ণদাস [লাউডিয়া], রঘুনাথ পন্ডিত [ভাগবতাচার্য্য], সনাতন চক্রবর্ত্তী, অভিরাম গোস্বামী, কৃষ্ণদাস [কাশীরাম দাসের ভ্রাতা], শ্যামাদাশ, পীতাম্বর সিদ্ধান্তবাগীশ, রামকান্ত দ্বিজ, গৌরাঙ্গ দাস, নরহরি দাস, কবিশেখর দৈবকীনন্দন, হরিদাস, নরসিংহ দাস, রাজারাম দত্ত, অচ্যুতদাস, গদাদর দাস, দ্বিজ পরশুরাম, শঙ্কর দাস, জীবন চক্রবর্ত্তী, ভবানন্দ সেন, উদ্ধবানন্দ, ঈশ্বরচন্দ্র সরকার, রাধাকৃষ্ণ দাস

পদাবলী সাহিত্য – চন্ডীদাস, বিদ্যাপতি, গোবিন্দ দাস, জ্ঞানদাস, বলরাম দাস, গোবিন্দানন্দ চক্রবর্ত্তী, মুরারী গুপ্ত, সনাতন গোস্বামী, বাসুদেব ঘোষ, নরহরি সরকার, রায় শেখর, ঘনশ্যাম, রামানন্দ, রায় রামানন্দ, জগদানন্দ, গদাধর পন্ডিত, যদুনন্দন দাস, যদুনন্দন চক্রবর্ত্তী, পুরুষোত্তম, বংশীবদন, রঘুনাথ দাস, বৃন্দাবন দাস, রায় বসন্ত, লোচন দাস, নরোত্তম দাস, বীর হাম্বীর, দুখিনী, দ্বিজ মাধব, মাধবী দাসী, রঘুনন্দন গোস্বামী, গৌরীদাস পন্ডিত ও তাঁর ভাই কৃষ্ণদাস, পীতাম্বর দাস, পরমেশ্বরী দাস, যদুনাথ আচার্য্য, প্রসাদ দাস, উদ্ধব দাস, রাধাবল্লভ দাস, পরমানন্দ সেন, ধনঞ্জয় দাস, গোকুল দাস, আনন্দ দাস, কানুরাম ইত্যাদি)

মুসলমান পদকর্তাগন – আলাওল বা আলোয়াল, অলিরাজা, চাঁদ কাজী, গরিব খাঁ, ভিখন, সৈয়দ মর্ত্তুজা

বৈষ্ণব চরিতাখ্যান – শ্রীচৈতন্যের যুগ

গোবিন্দদাসের কড়চা, চৈতন্যমঙ্গল (জয়চন্দ্র), চৈতন্য ভাগবত (বৃন্দাবন দাস), চৈতন্য চরিতামৃত (কৃষ্ণদাস কবিরাজ), চৈতন্যমঙ্গল (লোচন দাস), অদ্বৈতপ্রকাশ, গৌরচরিত চিন্তামনি, নিত্যানন্দ বংশমালা, বংশী শিক্ষা

শ্রীচৈতন্যোত্তর যুগ – ভক্তি রত্নাকর, প্রেমবিলাস

বিবিধ সাহিত্য – আলাওলের পদ্মাবত, বৌদ্ধরঞ্জিকা, নীলার বারমাস, বিক্রমাদিত্য কালিদাস প্রসঙ্গ, সখীসেনা, দামোদরের বন্যা, গোসানী মঙ্গল, মদনমোহন বন্দনা, চন্দ্রকান্ত, সঙ্গীত তরঙ্গ, ঊষা হরণ, বৈদ্য গ্রন্থ, বৈষ্ণব দিগদর্শন, সপিন্ডাদি বিচার, উজ্জ্বল চন্দ্রিকা, বৃহৎ সারাবলী, কুলজী সাহিত্য, ঐতিহাসিক সাহিত্য (মহারাষ্ট্র পুরান, সমসের গাজীর গান, রাজমালা)

রাজসভার সাহিত্য – নদীয়া – রাজা কৃষ্ণদন্দ্র এবং ঢাকার রাজা রাজবল্লভ, মহারাজা নন্দকুমার, মহারাজা হরেন্দ্র নারায়ন রায়, কুমার শঙ্কুচন্দ্র রায়, দেওয়ান রঘুনাথ রায়, দেওয়ান রামদুলাল নন্দী, দেওয়ান গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ

লোক বা জন সাহিত্য

গান ও কথকতা – শাক্ত ও নানাবিষয়ের গান (আনন্দময়ী, গঙ্গামনি দেবী, কর্তাভজা লাল শশী, গোপাল উড়ে, কাঙ্গাল হরিনাথ, কাবেল কামিনী, পাগলা কানাই, মির্জা হুসেন আলি, রামকৃষ্ণ রায়, শিবচন্দ্র রায়, রামনিধি গুপ্ত, দাশরথী রায়, কমলাকান্ত ভট্টাচার্য, রামপ্রসাদ সেন, আজু গোঁসাই, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত

কবিগান ও কবিয়াল (রামবসু, এন্টনী ফিরিঙ্গী, ঠাকুর সাহা, রঘুনাথ দাস, গোঁজলা গুঁই, হরু ঠাকুর, ভোলা ময়রা, নিত্যানন্দ বৈরাগী)

যাত্রাগান (পরমানন্দ অধিকারী, লোচন অধিকারী, গোবিন্দ অধিকারী, কালাচাঁদ পাল, পীতাম্বর অধিকারী ইত্যাদি)

কীর্ত্তন গান (গঙ্গানারায়ন চক্রবর্ত্তী, মঙ্গল ঠাকুর, চন্দ্রশেখর ঠাকুর, শ্যামানন্দ ঠাকুর, বদনচাঁদ ঠাকুর, পুলিনচাঁদ ঠাকুর, নিমাই চক্রবর্ত্তী, বংশীদাস ঠাকুর, হারাধন দাস, দীনদয়াল দাস, বনমালি ঠাকুর ইত্যাদি)

গীতিকা সাহিত্য – মহুয়া, মলুয়া, কঙ্ক ও লীলা, আঁধাবধু, রানী কমলা, চন্দ্রাবতী, ঈশা খাঁ, শ্যামরায়, নুরস্নেহা, মানিকতারা ইত্যাদি।

বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ

ঠিক এই সন্ধিক্ষণে আমাদের একটু দাঁড়াতে হবে। এরপর শুরু হবে বাংলা সাহিত্যের এক ঐতিহাসিক যুগ। মুদ্রণ এর যুগ। এতক্ষণ যে সব কালজয়ী সাহিত্যের কথা বলা হয়েছে সে গুলি সবই হাতে লেখা, পান্ডুলিপি বা পুঁথি আকারে। এখনো ছাপা কোন বই পাওয়া যায়নি। কারণ ছাপার পদ্ধতি ভারতে তখনো আসেনি।আর একটা কথা, এই সাহিত্য কিন্তু কখনই সাধারন মানুষদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য সৃষ্টি হয়নি, সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্যছিল ধর্ম। তাই সাধারন মানুষ এই সব সাহিত্য কে ভক্তিভরে প্রণাম করে দূরে সরিয়ে রাখত, ঠাকুর ঘরে ধূপ দিয়ে পুজোও করত। সাহিত্য ছিল কাব্য নির্ভর, ছন্দে ভরপুর। গদ্য লেখার প্রচলন ছিল না তেমন।