search

Monday, September 22, 2014

আমার বাবা...


একটা মানুষের জীবনে পঁচিশ বছর বেশ বড় সময়কাল, জানি না কতদিন বাঁচব, তবুও প্রায় আমার জীবনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সময়কাল। আজ থেকে ঠিক পঁচিশ বছর আগে, ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯, বাবা মারা যান। মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগে নবাব বাহাদুর’স স্কুলে আমি তখন ক্লাস সেভেনের ছাত্র... প্রথমটা একটু হকচকিয়ে গেলেও খুব একটা দুঃখ পেয়েছিলাম বলে মনে করতে পারিনা, আসলে সেই হাসপাতালে বাবা কে ভর্তি করা থেকে ম্যাটাডোরে করে বহরমপুর শ্মশানে তাঁর দেহ দাহ করা পর্যন্ত্য একটা কেমন যেন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। প্রতি বছরই পুজোর ঠিক আগে বাবা হাসপাতালে ভর্তি হতেন, আবার কয়েকদিন পরে ফিরেও আসতেন, কিন্তু এবার যে আর হাসপাতাল থেকে ফিরবেন না সেটা
বুঝতেও বেশ কয়েকদিন লেগেছিল। এরপর বহরমপুরেই আত্মীয়-স্বজন, বাবার অফিসের কাকুরা, আর বাবার কো-অর্ডিনেশন কমিটির সব চেনা লোকজনের মাঝে আমি ঠিক অনুভব করতে পারিনি কি হারিয়েছি... আর সেই সময় সমস্ত বাবা ছাই হয়ে যাবার পর, গঙ্গায় ডুবদিয়ে ভিজে সাদা কাপড়ে বাড়ি আসতেই মেজজেঠুর ছেলে রাজেশদাদা যখন তার সমস্ত গল্পের বইয়ের ভান্ডার অবলীলাক্রমে আমার হাতে দিয়ে দিল, সদ্য বাবা হারানো ছেলেটা তাতেই ডুবে গেল দিন দশেক। গাদা গাদা ছোট ছোট আনন্দমেলা, শুকতারার নেশায় সকালে কাঠের ধোঁয়ায় হবিষ্যি রান্না করাও খুব মজার সঙ্গে করেছিলাম, সেই দশ-বারো দিন, আমি প্রায় আমার তেরো বছরের জীবনে সবচেয়ে বেশী গোগ্রাসে গল্প গিলেছিলাম... ...... 
 

সব কিছু মিটে যাবার পর যখন ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিস সংলগ্ন কোয়ার্টারটিতে ফিরে এসে কয়েকদিন আগে বাবার কিনে দেওয়া সাইকেলটা দেখে প্রথম আমার বাবার অভাব মনে হল, ভাবলাম বাবা যে বলে গেল হাসপাতাল থেকে এসে আমাকে সাইকেল শেখাবে, এখন সেটার কি হবে ? তার পর যখন স্কুল যাবার সময় বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়ালাম...এই প্রথমবার একা একা... হটাৎ কোথা থেকে একরাশ কান্না এসে আমাকে বুঝিয়ে দিল, বাড়ির ভেতরে শোকাচ্ছন্ন মা থাকলেও, এই বাইরের জগতে আমি একেবারে একা... ...সেই শুরু হল আমার একা পথচলা... বারবার আছাড় খেয়ে রক্তারক্তি করে একা একা সাইকেল শেখা...আরো কত কি শেখা... 

তবে সত্যিকরে উপলব্ধি করলাম নিজে বাবা হয়ে... প্রতি মুহুর্তে একটি একটি করে নতুন জিনিস শিখছি... আর একটু একটু করে সেই পঁচিশ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মানুষটাকে বুতে পারছি...
সেই মানুষটা যার কাছে সর্বহারাদের পার্টি ছিল প্রথম সংসার, যে অবলীলাক্রমে তার মাস মাইনের টাকা ঘর পুড়ে যাওয়া রহেদ শেখ বা বন্যায় ফসল ভেসে যাবার পর হারান ঘোষের হাতে তুলে দিয়ে এসে স্ত্রীর গঞ্জনা শুনত, যার প্রিয় গান ছিল “ও আমার রক্তে ধোয়া ধান” আর “পথের ক্লান্তি ভূলে”,যে ছেলের পুজোর জামা কেনার টাকা দিয়ে পোস্টার লেখার রঙ তুলি নিয়ে চলে আসত, একাধারে লেখা, নির্দেশনা আর অভিনয়ে ব্যস্ত সেই নাটক পাগল লোকটা, যে ভগীরথপুর নামের এক অজ পাড়াগাঁয়ে প্রতিবছর দশমীর দিনে নতুন নতুন নাটকের আইডিয়ায় মত্ত থাকত, এক অতি সাধারণ পাজামা-পাঞ্জাবী পরিহিত গ্রামসেবক, যে চায়ের দোকানে মুড়ি খেতে খেতে সাধারণ মানুষদের মার্কসবাদ আর মাজরা পোকার কথা বলতে বলতে রাত কাবার করে বাড়ি আসত, আর রাতে ছেলেকে তার নিজের ছেলেবেলার দুষ্টুমির গল্প বলে তাক লাগিয়ে দিত, সেই বাবাটা যেন আরো বেশী বেশী করে আমার কাছের মানুষ হয়ে উঠছে... 

কেমন ছিল সেই সব নাটক যা তিনি লিখে গেছেন ?  

মণিমঞ্জিলের শুরুতে -

 আর প্যালেস দি কাঞ্চন -


 .

















                     [ কলকাতা থেকে কিছু দূরে কল্পিত এক পট ভূমিকায় নাটকের শুরু। পর্দা উঠলে দেখা যাবে প্যালেস দি কাঞ্চনের একটা হল ঘর। বাঁধারে একটা সিঁড়ি। সিঁড়ির ডানধারে একটা বড় দরজা। দরজার ভেতর দিয়ে একটা বারান্দার কিছু অংশ দেখা যাবে।

   রাত গভীর, স্টেজ প্রায় অন্ধকার। ঝড়ের শব্দ। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। কুকুরের ডাক শোনা যায়। কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ের ভয়ার্ত চীৎকার শোনা গেল পারব না, আমি কিছুতেই পারব না। মেয়েটা সিঁড়ি দিয়ে তাড়াতাড়ি নেমে রেলিং ধরে হাঁপাতে লাগল। একটা আলো তার উপর পড়ে। অন্য পাশে একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে, সারা দেহ কালো লং কোটে ঢাকা, মাথায় নাইট ক্যাপ, চোখে গগলস, মুখে ফ্রেঞ্চ কাট দাঁড়ি, হাতে একটা রিভলবার, মুখে চুরুট, পায়ে কালো নাগরা। লোকটা সিঁড়ির দিকে পেছন করে দর্শকদের একপাশে রেখে দাঁড়িয়ে থাকবে। মেয়েটা লোকটাকে দেখতে পায়নি। লোকটা হটাৎ দেশলাই জ্বালিয়ে চুরুট ধরায়। মেয়েটা ভয় পায়। মেয়েটার নাম মুন্নী কলকাতার কুখ্যাত এলাকা থেকে তাকে এখানে আনা হয়েছে। মুন্নীর বয়স ২৪/২৫, মেয়েটা মোটামুটি সুশ্রী।]

Friday, August 08, 2014

একটি বৃষ্টির দিন

একটি বৃষ্টির দিন
-  সৌরভ বাগচী
আজ বৃষ্টি হতে পারে, মা বলল – “আজ যেতে হবেনা তোকে”। ঠিকই বলেছে মা। আমি মেঘের দিকে তাকালাম। মেঘ করলে মন খারাপ হয় কেন জানিনা। কিন্তু শাশ্বত তো আসবে। আমিও যাব। কাল যখন বাড়ি ফিরছিলাম তখন ও অনেকটা ঘুরপথে আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। পৌঁছে দেওয়া মানে তো দূরত্ব বজায় রেখে সাইকেল নিয়ে আমার পেছনে আসা। ও কোনোদিন কিছু বলে না, শুধু তাকায়, চেয়ে থাকে। আর ওই আদ্যিকালের সাইকেলে চড়ে আমাদের রাস্তার ঠিক আগে চলে যায়, যেন ওর চলে যাওয়াটাই সবচেয়ে সত্যি, আর কিছু নয়।

কাল ঘুমোতে পারিনি সারারাত। কি অদ্ভুত অনুভূতিভেবেছিলাম ও হয়তো কিছু বলবে। আমি বিশ্বাস করি ও একদিন বলবেই। আজ দেখা হলে জিগ্যেস করব কি বলতে চাই ও। না আমি কিছু বলব না, অপেক্ষা করে থাকি, কিন্তু কতদিন। আর কাউকে বলব ? না দরকার নেই।

ও খুব ভাল ছেলে। অনেকেই সেটা জানে বা বলে। যদিও সিগারেট খায়, মরুকগে ছাই। বলুক না একদিন তখন দেখা যাবে। আমার সাথে অবশ্য কোনদিন খারাপ ব্যবহার করেনি। ওর নিস্পাপ দুটো আমাকে বিহ্বল করে দেয়। তাকিয়ে থাকি ওর দিকে। কি যে হয় তখন। আমার মনে হয় আমাকে ওর ভালো লাগে, ভালোবাসে কি ? যদি না বাসে, যদি শুধুই বন্ধুদের কাছে হিরো হওয়ার জন্যে আমার পিছনে লেগেছে, তাহলে ? কি করে বুঝব, কাউকে বলাও যাবে না, শুধুশুধু আওয়াজ খাবো বন্ধুদের কাছে। আসলে, ওর কথা অন্যকেউ বললে, আমার রাগ হয়, নিজের একান্ত অনুভব গুলো অন্য কারো সাথে শেয়ার করা যায়না। ও আমার এমন ই এক অনুভব। একে কি ভালবাসা বলে ? জানিনা।

মাকে পটিয়ে যাওয়া যায় আজকে। আমি না গেলে যদি ও আমাকে ডাকতে চলে আসে ! যেমন এসেছিল একদিন। আমার জ্বর হয়েছিলো। ও ঠিক আমাদের গেটের সামনে এসে ডাকলো আমার নাম ধরে। বুক শুকিয়ে গেছিলো আমার। মা রান্নাঘরে, বাবা অফিস থেকে ফেরেনি তখোনো। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসেছিলাম ওকে চলে যেতে বলার জন্য। পাড়ার লোকরাও তো দেখে ফেলতে পারে । ও কেমন সহজভাবে বলল, “আজ যাসনি কেন?” “জ্বর হয়েছে আমার” – বলে আমি দু পা পিছিয়ে এসেছিলাম, ও যদি আমার কপালে হাত দেয়, কিছু বিশ্বাস নেই ওকে। অবশ্য সত্যি লোভ লেগেছিল আমার ওর স্পর্শ পাবার। ও আরো বলেছিলো, “তোর সাথে একটা কথা আছে..."

   “কি কথা, তাড়াতাড়ি বল” – আমি এমন ভাবে বলেছিলাম, যেন ওর কথা শোনার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই আমার, কিন্তু কেউ না জানুক আমি তো জানি, কত কস্টে আমি উত্তেজনা চেপে রেখেছিলাম।

   “আমি, ... আমি কিন্তু তোর পেন টা নিই নি”

আমার একটা পেন স্যর এর বাড়ি থেকে হারিয়ে গেছিল। স্যর বলেছিলেন, ওর কাছে থাকতে পারে। আমি জানি শাশ্বত, তুমি সেটা নাও নি।

   “তোর আর কিছু বলার আছে ?”

   “না, তুই তারপর থেকে আমাকে আ্যভয়েড করে চলিস, কথা বলিস না - ”

   “কথা বলা না বলা টা আমার মুডের ওপর নির্ভর করে” – আমার স্বর টা অকারণে একটু রূঢ় হয়ে গেছিল বোধহয়।

   “ঠিক আছে, চলি...” ও সাইকেলে আওয়াজ তুলে চলে গেছিল।
আমি গেট ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম মিনিট দুয়েক। ঝুনঝুন, ঝুনঝুন। আমাদের গেটে একটা ঘুঙুর লাগানো আছে, সেটার শব্দে নিজেকে সামলে নিয়ে ভেতরে গিয়েছিলাম। চোখে জল এসে গিয়েছিল আমার। ওর সাথে কথা বলতে গিয়ে কি যে হয়ে যায় আমার, সব উলটো পালটা বলে ফেলি।

   আমার না যাওয়া উচিত আজকে। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামবে। স্যর বোধহয় পড়াবেন না। স্যর এর বাড়িতেই দেখি ওকে প্রথমবার। ক্লাস নাইন এ ভর্তি হয়েছে আমাদের স্কুলে। আগে কোথায় যেন পড়ত। স্যর খুব ভালো পড়ান। আর খুব মজার মজার কথা বলেন। আমরা হেসে উঠি। আর শাশ্বত সঙ্গে সঙ্গে আমার দিকে তাকায়। ও ওরকমই, যখন তখন তাকায় আমার দিকে। আমি যে কি করে লুকিয়ে রাখি আমার দুর্বলতা। ও কি বোঝে কিছু, বোকা কোথাকার, কিছু বোঝে নে ছেলেটা। শুধু আমাকে জ্বালাতে পারে। এখানে ওখানে যেখানে আমি যাই না কেন, একবার হলেও আসবে সেখানে। গত দূর্গাপুজোতে, অষ্টমীর অঞ্জলি দেবার সময় দেখি ও একদম আমার পেছনে, কি সাহস, মা ছিল কাছেই, যদি দেখে ফেলত ! একটুও ভয়ডর নেই। আমি ওর দিকে ঘুরে তাকিয়ে ছিলাম, এমন ভাব করলো, যেন চেনেই না আমাকে। এত রাগ হয়েছিল না।

আকাশ ঘিরে মেঘ করেছে। এক্ষুণি বৃষ্টি নামবে।  ছাতা নিতে হবে। আমি ড্রেস করলাম তাড়াতাড়ি। ৫ টা বাজতে ১৫ মিনিট। স্যর ৫ টা থেকে পড়ান। মা কিছু বলল না আর। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। আজ যদি শাশ্বত বলে দেয় ওর যা বলবার, তবে আমি কি বলব ? আমার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধার্ন্ত কি অত সহজে নেওয়া যায় ? আমি যে এত কিছু ভাবছি, ও কি এসব ভেবেছে কোনোদিনও, ওর কাছেও তো সমান গুরুত্বপূর্ণ এটা। সত্যিই কি তাই, নাকি শুধু বন্ধুদের কাছে হিরো হবার ইচ্ছা? কে জানে।

এই মরেছে, ছাতা আনতে গেছি ভুলে। স্যর এর বাড়ি এখান থেকে যতটা, ততটাই আমার বাড়ি। আমার বাড়ি ! মেয়েদের নিজেদের বাড়ি থাকে নাকি কোনো ? হয় বাপের বাড়ি, শ্বশুর বাড়ি, স্বামীর ... ছেলের...। বৃষ্টি আসলে ভিজব। ‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে, ধান দেব মেপে’। আচ্ছা কাকে দেব মেপে ধান ! বৃষ্টিকে কি দেওয়া যায় কিছু, বৃষ্টিতো শুধু কথা বলবে অর্নগল, রিমঝিম ঝরঝর, চোখ বেয়ে ঠোঁটের উপর খুঁজবে কালো তিল। আমার কি হলো আজ, কবি হয়ে যাচ্ছি নাকি। শাশ্বত কবিতা লেখে স্কুল ম্যাগাজিনে। আমাকে নিয়ে লেখে ? জানিনা। এখন যদি ও আসে তা হলেও আমি তাকাব না পিছনে। ওর দিকে না তাকালে ও আমার সাথে কথা বলবে না।

সাইকেলের শব্দ শুনতে পাচ্ছি, শাশ্বত আসছে। আমি কি ঘুরে তাকাব? না তাকাব না। ও তো ডাকতেও পারে।  বৃষ্টির ফোঁটা টুপটাপ পড়ছে গায়ে। সাইকেল টা পাশে আসতেই তাকালাম। না শাশ্বত না, কিন্তু লোকটার দৃষ্টি টা খুব খারাপ। ‘অসভ্য, ছোটলোক’ , দাঁত চিপে মনে মনে বললাম। এই বাবার বয়সি লোকগুলো এত বিকৃত রূচির হয়। মা ঠিক ই বলে, সব পুরূষ সমান। কথাটা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের লেখা একটা উপন্যাসেও পড়েছিলাম মনে হয়। ভদ্রমহিলা কে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত সত্যি কথাটা বলার জন্য।

ওই তো স্যর এর বাড়ি। প্রচন্ড বৃষ্টি পড়ছে, পুরো ভিজে গেছি আমি। এক দৌড়ে স্যর এর বারান্দায় উঠে আমি স্তব্ধ। শাশ্বত বসে আছে একা, স্যর এর ঘরের দরজায় তালা।

“স্যর পড়াবেন না আজ। সবাই এসে চলে গেছে।“ – ও বলল।

“তুই বসে আছিস কেন?” – ওড়নার কোণা দিয়ে মুখের পাশটা মুছতে মুছতে বললাম।

“তোর জন্যে   ” --- আমাকে চমকে দিয়ে বলল ও।

“আমি যাই” বলে পা বাড়ালাম রাস্তার দিকে।

শাশ্বত একবারও ডাকবে না আমায়? আস্তে আস্তে হাঁটছিলাম আমি। আরো ভিজে যাচ্ছিলাম। আর কয়েক পা গেলে আর দেখতে পাবে না আমাকে। ওকে মারতে পারলে ভালো লাগতো। আর একটু আস্তে হাঁটা যায় না ?

“ পাপড়ি শোন-----" ও ডাকলো ।

আমি কি ভুল শুনলাম ?

“পাপড়ি বারান্দায় উঠে আয়”

আমি থামলাম। ঘুরে বললাম, “কেন ?”

“এখানে আয় আগে, বলছি।"

কি বলবে ও ? উঠে এলাম। একদিকে উঁচু বসার জায়গা। বসলাম।

“তুই একদম ভিজে গেছিস, বৃষ্টি টা একটু ধরে আসলে, আমি তোকে পৌঁছে দেব” আমার দিকে তাকিয়ে বলল ও।

আমি তাকাতে পারছিলাম না ওর দিকে। তাকিয়ে ছিলাম বৃষ্টির দিকে। মনের মধ্যে জলতরঙ্গ বাজছিলো। সুরটা রিমঝিম রিমঝিম

একটু পরেই বৃষ্টির বেগ কমলো। আমাকে ওর ছাতা টা দিলো শাশ্বত। ও ভিজে যাচ্ছিল। ওকে ছাতার ভেতর আসতে বললাম। আমার ডান হাত ওর বুকে ঠেকে যাচ্ছিল ছাতা টা ধরে থাকার জন্যে। আমি সরালাম না। সরাতে পারলাম না। একটু উষ্ণতা, ভালোলাগা আমাকে অবশ করে দিয়েছিল।

“পাপড়ি----“

আমি তাকালাম। বৃষ্টির জল পরেছিল বোধহয় আমার চোখে। ওকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম না। এত কাছে তবুও।

ও হাত ধরলো আমার। আমি বাধা দিলাম না।

“পাপড়ি------"

আমি মনে মনে বললাম শাশ্বত, আজ আর কিছু বলো না, আর একদিন বৃষ্টি আসবে, আবার একদিন...... সেদিন.........।











Tuesday, June 10, 2014

কয়েকদিন আগে গৌড় মালদার উপর কিছু বই খুঁজতে গিয়ে একটি বই-এ চোখ আটকে গেল। বইটির নাম “The Ruins of Gour Described"



১৮১৭ সালে লন্ডনের ব্ল্যাক, পারবারি ও অ্যালেন দ্বারা প্রকাশিত বইটি সংকলিত হয়েছে প্রয়াত এইচ ক্রেইটনের পাণ্ডুলিপি ও চিত্রাঙ্কন থেকে। বইটির ভূমিকা থেকে জানা যায় যে হেনরি ক্রেইটনের জন্ম স্কটল্যান্ডে এবং তিনি সান্ডারল্যান্ডে থাকতেন। ১৭৮৩ সালে, তিনি চার্লস গ্র্যান্টের বাণিজ্যিক সহকারী হিসেবে যোগ দেন,  চার্লস গ্র্যান্ট তখন বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তূলা এবং রেশম কারখানার মালদা জেলার কমার্সিয়াল রেসিডেন্টের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী।  কয়েক মাইলের মধ্যেই অবস্থিত গৌড়ের ঐতিহাসিক ধ্বংসস্তূপ। গ্র্যান্ট একটি নীল কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন গোমালটি গ্রামে, যা ছিল সেই বিখ্যাত গৌড় নগরের অভ্যন্তরে। ক্রেইটনকে তিনি সেখানে তদারককারী হিসেবে নিয়োগ করেন এবং ক্রেইটন ১৭৮৬ সাল থেকে ১৮০৭ সালে চল্লিশ বছর বয়েসে তাঁর অকালমৃত্যুর সময় পর্যন্ত সেইখানেই থাকতেন।

          কাজের ফাঁকে ফাঁকে গৌড় নগরের অতীত ইতিহাসের হাতছানি প্রায় নেশা হয়ে উঠেছিল হেনরি ক্রেইটনের। মৃত্যুর সময় বিধবা স্ত্রী এবং সাত সন্তানদের জন্য প্রায় কিছুই রেখে যেতে পারেননি হেনরি। শুধু এই সময়কালে অবসর সময়ে ইতিহাসের খোঁজে গৌড়ের ধ্বংসস্তূপের যে সচিত্র বিবরণ তিনি রেখে গিয়েছিলেন উত্তরকালের জন্য, তা মহাকালের মূল্যে অপরিসীম। তাই সেই প্রয়াত সহকর্মীর স্ত্রী ও সন্তানের জন্য অর্থসংস্থানের উদ্দেশ্যে এই বই-এর সংকলন।

          এই বই বিক্রির অর্থ থেকে হেনরির পরিবার কতটা লাভবান হয়েছিলেন তা আমাদের জানার কোন উপায় না থাকলেও, গৌড় ধ্বংসস্তূপের অসামান্য রেখাঙ্কন ও তার সঙ্গে সেই স্থানের সংক্ষিপ্ত ঐতিহাসিক বিবরণ তাঁর মৃত্যুর দুশো বছরেরও কিছু বেশী সময়ধরে ইতিহাস গবেষকদের সমৃদ্ধ করেছে, এ বিষয়ে আমরা একমত হতে পারি।


          শিল্পী ও ঐতিহাসিক হেনরি ক্রেইটনের উদ্দ্যেশে নীরব শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাই, তাঁরই আঁকা ছবির মাধ্যমে ......